লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার সৌদি আরবের কাছে 'অবিশ্বাস্য' হার ৮০ হাজার মানুষের সামনে কাতার বিশ্বকাপের ফেভারিট আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে গেল

লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার সৌদি আরবের কাছে 'অবিশ্বাস্য' হার ৮০ হাজার মানুষের সামনে কাতার বিশ্বকাপের ফেভারিট আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে গেল ছবির উৎস ছবির ক্যাপশান, লিওনেল মেসি (ফাইল ছবি) ১৩ মিনিট আগে লুসাইল স্টেডিয়ামের ৮০ হাজার মানুষের সামনে কাতার বিশ্বকাপের ফেভারিট আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে গেল। ২-১ ব্যবধানে হেরেছে লিওনেল মেসির দল। গ্রুপ সি তে আজ প্রথম এই ম্যাচটি মাঠে গড়ায় যেখানে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রথম থেকেই সৌদি আরব আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে। খেলা দেখে মনেই হয়নি আর্জেন্টিনা ফিফা র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানীয় একটি দল এবং সৌদি আরব আছে র‍্যাংকিংয়ের ৫১তম স্থানে। ম্যাচের প্রথমার্ধ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা এগিয়ে ছিল ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই ভুল করে বসে সৌদি আরবের রক্ষণভাগ। লিওেনল মেসির একটি ফ্রি কিক থেকে আসা বল রুখতে গিয়ে আর্জেন্টিনার একজন ফুটবলারের সাথে ধাক্কাধাক্কি করেন সৌদি আরবের এক ডিফেন্ডার। রেফারির নজরে সরাসরি না এলেও তিনি ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির মাধ্যমে চেক করে সিদ্ধান্ত নেন এটি পেনাল্টি ছিল। লিওনেল মেসি ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে পাঠান। মেসির শট বুঝতেই পারেননি সৌদি আরবের গোলকিপার আল ওয়াইস, তিনি ভিন্ন দিকে লাফ দেন বল ঠেকাতে। লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার প্রথম ফুটবলার হিসেবে চারটি আলাদা বিশ্বকাপে গোলের রেকর্ড গড়েছেন। এই রেকর্ড আছে আর ব্রাজিলের কিংবদন্তী ফুটবলার পেলে, জার্মানির উইয়ে সেলার, মিরোস্লাভ ক্লোজার এবং পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। তারপরই শুরু হলো সৌদি আরবের ডিফেন্ডারদের অফসাইড ফাঁদের সাথে আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ডের খেলা। প্রথমার্ধে মোট সাতবার অফসাইডের ফাঁদে পড়ে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা ২০১৮ বিশ্বকাপের চার ম্যাচের সবগুলো মিলিয়েও এতোবার অফসাইডে পড়েনি। এর মধ্যে লিওনেল মেসি ও লওতারো মার্টিনেজের গোল উদযাপনও শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রায়। কিন্তু লাইন্সম্যান ততক্ষণে পতাকা উঁচিয়ে জানান দিয়েছেন ওটা অফসাইড। লাইভের ধারাভাষ্যকার ক্লিনটন মরিসন বলেন, “সৌদি আরব অনেক উঁচু লাইন ধরে খেলছে। যখন আপনি বলে খুব একটা চাপ না দিতে পারেন তখন এটা অনেক কঠিন।” তবে সৌদি আরব রক্ষণাত্মক খেলেনি। বল খুব বেশি দখলে রাখতে না পারলেও ধীরে ধীরে আক্রমণে শান দিতে থাকে সৌদি আরবের ফরোয়ার্ডরা। হাফটাইম পর্যন্ত সৌদি আরব পিছিয়ে থাকলেও সন্তুষ্ট মনেই মাঠ ছাড়ে দলটি। কারণ তখনও লিওনেল মেসির পেনাল্টি গোল ছাড়া আর্জেন্টিনা কোনও শট গোলে নিতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে সৌদি আরব ছিল সেরা দল স্পোর্টের দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল এক্সপার্ট টিম ভিকারি , “সৌদি আরব যে হাই লাইনের ঝুঁকি নিয়েছে তা দিয়ে আর্জেন্টিনাকে থামিয়ে দিয়েছে বটে - কিন্তু তাদের আরও সরাসরি ফুটবল খেলতে হবে।” দ্বিতীয়ার্ধে সৌদি আরব ঠিক এই কাজটিই করেছে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আর্জেন্টিনার অফসাইডের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় আটে। ঠিক ৪৮তম মিনিটে সৌদি আরব প্রথম গোল পায়। সালেহ আল শেহরি ফরোয়ার্ডে গিয়ে ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোর পাশ থেকে হেড নিয়ে এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে পরাস্ত করেন। রোমেরোর পা নড়েনি - বলছেন রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ডের সাবেক স্ট্রাইকার ক্লিনটন মরিসন। কেউ এটা ভাবেইনি কখনো যা হলো। স্টেডিয়ামের আশে পাশে হাজারো সৌদি আরব সমর্থকরা সবুজ জামা পরে আনন্দ করে বেড়াচ্ছেন। তারা কেউ ভাবেনি এমন কিছু হতে যাচ্ছে।” কিন্তু তার ঠিক ছয় মিনিট পর যা হলো - তা গোটা বিশ্বকাপের হিসেবনিকেশই হয়তো বদলে দিতে পারে । আর্জেন্টিনার জালে দ্বিতীয় গোল করে সৌদি আরব। টুর্নামেন্টের আগে যে দল ছিল টপ ফেভারিট - তারা সৌদি আরবের কাছে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়লো ম্যাচের মাঝপথে। সালেম আল-দাওসারির গোলে সৌদি আরব এগিয়ে গেল। লাইভের ধারাভাষ্যকার মার্ক স্কট বলেন, “দেখে মনে হচ্ছে স্কালোনি এখন জানেন না তিনি কী করতে যাচ্ছেন।” “আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয়ার্ধে দেখে মনে হয়েছে তারা নিজেদের অর্ধ থেকে বল বের করতে পারছে না। তাদের রিক্ত মনে হচ্ছে”। ১৯৯৪ সালের পর এই প্রথম সৌদি আরব বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে গোল পেয়েছে। এরপর শুরু হয় আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ডের সাথে সৌদি আরবের ডিফেন্সের খেলা। সৌদি আরবের হাসান আল তামবাখত ট্যাকল করে গোল ঠেকিয়ে দেন ৫৬তম মিনিটে। লিওনেল মেসি চেষ্টা করেছেন কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। স্পোর্টের । তিনি বলেন, সৌদি আরবের সমর্থকরাই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কী হচ্ছে। দ্বিতীয় গোল হজম করার পর দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নেন স্কালোনি। কিন্তু সেসব কোন কাজেই দেয়নি। ৯০ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনার আক্রমণেই খেলা চলতে থাকে। একবার গোললাইন থেকেও বল ফিরিয়ে দেয় সৌদি আরবের ডিফেন্স। শেষ পর্যন্ত সৌদি আরব ২-১ গোলের জয় দিয়ে ম্যাচ শেষ করে। ক্লিনটন মরিসন বলেন, “আর্জেন্টিনা খুবই খারাপ খেলেছে সেকেন্ড হাফে। তাদের আরও গিয়ার ওপরে ওঠানো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সৌদি আরব পুরোপুরি ম্যাচটার জন্য উজ্জীবিত ছিল। আর্জেন্টিনার র‍্যাংকিং কিংবা দলের শক্তি কিছুই কাজে আসেনি।”

Post a Comment

0 Comments